ক. কাজ করার পরিবেশ এবং ইন্টারফেস-এর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করাযায়। যথা-
১. বর্ণ-ভিত্তিক (Text Based / Character User Interface-CUI) অপারেটিং সিস্টেম
২. চিত্র-ভিত্তিক (Graphical User Interface - GUI) অপারেটিং সিস্টেম
খ. ব্যবহারকারীর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. একক ব্যবহারকারী (Single User) অপারেটিং সিস্টেম
২. বহু জন ব্যবহারকারী (Multi User) অপারেটিং সিস্টেম।
গ. প্রসেসরের এর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
1. একক প্রসেসিং (Single Processing) অপারেটিং সিস্টেম
2. মাল্টি প্রসেসিং (Multi Processing) অপারেটিং সিস্টেম
ঘ. স্বত্ব-মালিকানার উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. ওপেন সোর্স (Open Source) অপারেটিং সিস্টেম
২. প্রোপাইটারি (Proprietary) অপারেটিং সিস্টেম
ঙ. মেমোরি সংগঠন, বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালানো এবং সেকেন্ডারি বা সহায়ক মেমোরি ডিভাইসগুলোর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-
1. ব্যাচ প্রসেসিং বা অফ-লাইন অপারেটিং সিস্টেম (Batch Processing Operating System )
2. মাল্টিপ্রোগ্রামিং বা মাল্টিটাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprogramming or Multitasking )
3. মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম (Multiprocessing Operating System )
4. রিয়েলটাইম অপারেটিং সিস্টেম (Realtime Operating System )
5. টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time Sharing Operating System)
6. ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম
▪️ বর্ণ বা টেক্সটভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম
এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম হলো কমান্ড লাইন ইউজার ইন্টারফেস। ডিস্ক ফরমেটিং থেকে শুরু করে ফাইল ব্যবস্থাপনা এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সব কাজ কী-বোর্ডের কমান্ডের মাধ্যমে করতে হয়। তাই বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে অনেকগুলো কমান্ড মুখস্থ করতে হয়। যেমন- Linux, Unix, MS-DOS, PC DOS, CP/M ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেম।
বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো—
• বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম পরিচালনার জন্য Root Prompt বা Command Prompt (C:/> )ব্যবহৃত হয়।
• ডিস্ক ফরমেটিং থেকে শুরু করে ফাইল ব্যবস্থাপনা, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম, নতুন ডিভাইস শনাক্তকরণ সকল পর্যায়ের কাজই কমান্ড দিয়ে করতে হয়।
• এ ধরনের সিস্টেমের জন্য ব্যবহারকারীকে সকল কাজের কমান্ড মুখস্থ রাখতে হয়।
• নতুন কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার সংযোগ করা হলে কম্পিউটারকে বলে দিতে হয় কোথায় সংযোগ করা হয়েছে।
• নেটওয়ার্কিং বা ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকর নয়। তবে ইউনিক্স বালিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে নেটওয়ার্কিং বা ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যকর হয়।
• অল্প কিছু কমান্ড মুখস্থ করেই কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।
• এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম খুব দ্রুত কাজ করতে পারে।
• মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম কার্যকর নয়।
• এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কম্পিউটারে কম মেমোরির প্রয়োজন হয়।
বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর সুবিধাসমূহ
১. অল্প সময়ে বিভিন্ন রকম বর্ণ টাইপ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয় ।
২. অল্প কিছু কমাণ্ড মুখস্ত করেই কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।
বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর অসুবিধাসমূহ
১. বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে কী-বোর্ডের সাহায্যে বিভিন্ন বর্ণ টাইপ করে কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে হয়।
২. সবগুলো কমান্ডের জন্য নির্দিষ্ট বর্ণ এবং কী-বোর্ডের বাটনগুলো মুখস্ত রাখতে হয়।
৩. এই অপারেটিং সিস্টেমে কামান্ডের জন্য মেনু বা পুল ডাউন মেনু কমান্ড থাকে না।
৪. এই সিস্টেমে নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটের ব্যবস্থা কার্যকর নয়।
৫. এটি বর্ণ ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে কার্যকর নয়।
▪️চিত্রভিত্তিক বা গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম
গ্রাফিক্সের বা চিত্রের মাধ্যমে কমান্ড প্রয়োগ করে কম্পিউটার পরিচালনা করার সফটওয়্যারকে চিত্রভিত্তিক বা গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম বলে। এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন প্রকার আইকন ও পুলডাউন মেনু ব্যবহার করে ডিস্ক ফরমেটিং থেকে শুরু করে ফাইল ব্যবস্থাপনা এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের সব কাজ করতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামের আইকনের ওপর মাউস দিয়ে ডবল ক্লিক করলে প্রোগ্রামটি চালু হয়। তবে বর্ণভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের মতো কমান্ড মুখস্থ করতে হয় না। Windows 95/98/Xp/2000/7, Mac OS ইত্যাদি চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ। অপারেটিং সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো—
• চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে কম্পিউটার চালু করার পর ডেস্কটপে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আইকন বা প্রতীক থাকে।
• বিভিন্ন প্রকার আইকন এবং পুল ডাউন মেনু কমান্ড ব্যবহার করে কম্পিউটারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করা হয়।
• কমান্ডের জন্য মেনু এবং প্রতিটি মেনুর আওতায় অনেক পুল ডাউন মেনু কমান্ড থাকে।
• মাউসের সাহায্যে Icon এবং পুল ডাউন মেনু কমান্ড কার্যকরী করা যায়।
• নতুন কোনো হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার সংযোগ করা হলে কম্পিউটার নিজে থেকে বুঝতে পারে কোথায় সংযোগ করা হয়েছে।
• নেটওয়ার্কিং, শেয়ারিং ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
• এই ধরনের সিস্টেমের জন্য ব্যহারকারীকে কোনো ধরনের কমান্ড মুখস্থ রাখতে হয় না।
• মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম কার্যকর।
• এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কম্পিউটারে বেশি মেমোরির প্রয়োজন হয়।
চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর সুবিধাসমূহ
১. চিত্র ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে কামন্ডগুলো মুখস্ত রাখার প্রয়োজন হয় না।
২. বিভিন্ন প্রকার আইকন এবং পুল ডাউন মেনু কমান্ড ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করা হয়।
৩. এখানে কমান্ডের জন্য মেনু ও পুল ডাউন মেনু কমান্ড থাকে ।
৪. এই অপারেটিং সিস্টেমে নেটওয়ার্কিং, শেয়ারিং, ইন্টারনেট ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
৫. এটি বর্ণের পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়াতেও কার্যকর 1
৬. মাউসের সাহায্যে যে কোনো স্থানে রেখে কাজ করা যায়।
৭. ফাইল, ফোল্ডার ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের নাম মনে রেখেও কাজ করা যায়।
৮. শুধুমাত্র মাউস ব্যবহার করে কম্পিউটার পরিচালনা করা যায়।
চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর অসুবিধাসমূহ
১. মাউস নষ্ট হলে কম্পিউটার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
২. কোনো প্রোগ্রাম মুছে গেলে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
▪️একক ব্যবহারকারী (Single User) অপারেটিং সিস্টেম
একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে এক কম্পিউটারে কাজ করার জন্য যে ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাকে একক ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম বলে। এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বর্ণভিত্তিক ও চিত্র ভিত্তিক উভয়ই হতে পারে। যেমন- MS DOS কে বর্ণভিত্তিক একক ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়। WINDOWS 311, WINDOWS 95, WINDOWS 98, WINDOWS 2000 কে চিত্র ভিত্তিক একক ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়।
সাধারণভাবে সিঙ্গেলে ইউজার অপারেটিং সিস্টেম দু'ধরনের হতে পারে। যথা-
• সিঙ্গেল ইউজার, সিঙ্গেল টাস্ক (Single User, Single Task) : এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে কেবলমাত্র একটি প্রোগ্রাম চালাতে পারে। হাতের তালুতে রেখে ব্যবহারযোগ্য পাম (Pump) কম্পিউটারের জন্য তৈরি Palm OS (Operating system) হলো সিঙ্গেল ইউজার, সিঙ্গেল টাস্ক অপারেটিং সিস্টেম।
• সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টি টাস্কিং (Single User, Multitasking) : এ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে একজন ব্যবহারকারী একই সময়ে একাধিক প্রোগ্রাম চালাতে পারে। যেমন— একই সময়ে লেখালেখির কাজের সাথে গান শুনতে পারে আবার সেইসাথে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারে। যেমন -উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম।
▪️ বহুজন ব্যবহারকারী (Multi User) অপারেটিং সিস্টেম
একই কম্পিউটারে একই সময়ে বিভিন্ন ইউজার একসঙ্গে কাজ করতে পারে এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমকে মাল্টিইউজার অপারেটিং সিস্টেম বলে। এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বর্ণভিত্তিক ও চিত্র ভিত্তিক উভয়ই হতে পারে। যেমন- UNIX কে বর্ণভিত্তিক মাল্টিইউজার অপারেটিং সিস্টেম বলে। এছাড়াও WINDOWS XP/VISTA / NT, WINDOWS SERVER 2000. WINDOWS SERVER 2003, WINDOWS SERVER 2008, Mac OS, Linux কে চিত্রভিত্তিক মাল্টিইউজার অপারেটিং সিস্টেম বলে।
বহুজন ব্যবহারকারী (Multi User) অপারেটিং সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য
• একসাথে একাধিক ব্যবহারকারী একটি কম্পিউটারে কাজ করতে পারে।
• যুগপৎভাবে একাধিক প্রোগ্রাম প্রসেস করা যায়।
• প্রোগ্রাম প্রসেসের দক্ষতা অনেক বেশি।
• নির্দিষ্ট সময়ে তুলনামূলক বেশি আউটপুট পাওয়া যায় ।
• কম্পিউটার সিস্টেমের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
• ব্যবহারকারীকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না।
• প্রোগ্রাম প্রসেসের দক্ষতা ইনপুট-আউটপুটের উপর নির্ভরশীল।
• তুলনামূলক বেশি মেমোরি প্রয়োজন হয়।